বিশেষ প্রতিবেদনঃ জীবন রক্ষাকারী ঔষধের মান নিয়ন্ত্রণ করাই ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। তালিকাভুক্ত কোম্পানীর কতগুলো আইটেম অনুমোদন নিয়েছেন আর কতগুলো আইটেম উৎপাদন ও বাজারজাত করছেন প্রশাসনে তার সঠিক কোন তথ্য নেই। এমনো কোম্পানী আছে যাদের অফিস ও কারখানা খুঁজে পাওয়া ও কঠিন। ঔষধ নীতিমালা মতে, ঔষধ প্রশাসন অত্যাবশ্যকীয় সকল ঔষধের তালিকা সংরক্ষণ করে হালনাগাদ করাসহ স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণে ঔষধ উৎপাদন, বাজারজাত, ব্যবহার ও বিতরণে সঠিক মনিটরিং করবেন। কিন্তুু সঠিক তদারকির অভাবে ভেজালের ভয়াবহতা বেড়েছে। প্রশাসনিক কর্মকান্ডে জবাবদিহীতা না থাকায় ভেজাল নিয়ন্ত্রণে কারখানা পরিদর্শন, নমুনা পরীক্ষা, মাঠ পর্যায় তদারকির নামে আর্থিক অনিয়ম বহাল থাকায় অধিকাংশ কোম্পানী নিয়মের তোয়াক্কা না করে বিষাক্ত ও ক্ষতিকারক ঔষধ বাজারজাত করছেন। অনেক কারখানার লে-আউট, পরিবেশ ছাড়পত্র, দক্ষ জনবল ও মান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না থাকলেও তৈরি করছেন জীবন রক্ষাকারী ঔষধ। স্বাস্থ্য সেবার নামে চলছে ভেজাল ব্যবসায়ীদের কারসাজী।
বগুড়ার বেক্সটার আয়ুর্বেদিক ল্যাবরেটরীজ কোম্পানীর মালিক এস.এম. রুবেল তালুকদার একটি ঔষধ কোম্পানীতে চাকরি করার সুবাধে ফুড সাপ্লিমেন্ট বিক্রির কারসাজী আয়ত্ব করেন। আয়ুর্বেদিক ঔষধ কোম্পানীর মালিক হয়ে শুরূতেই রাজধানীর ফুড সাপ্লিমেন্ট ব্যবসায়ীদের ট্যাবলেট-ক্যাপসুল সরবরাহ করতে থাকেন। এভাবে অবৈধ্য ব্যবসা করে এখন তিনি দুটি ঔষধ কোম্পানীর মালিক। তার কোম্পানীর বাজারজাতকৃত ভেজাল ও ক্ষতিকারক ভিটামিন, ক্যালসিয়াম ও যৌনবর্ধক ঔষধ বেক্সটার গোল্ড, পাওয়ারবেক্স, জিনবেক্স, বেক্স-৩০ ছাড়াও নিম্মমানের ট্যাবলেট-ক্যাপসুল বিক্রির কারসাজী ধামাচাপা দিতে বিশেষ দিবসে ঔষধ প্রশাসনের সংশিষ্ট কর্মকতাদের অনৈতিক সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকেন বলে একটি সূত্রে জানা যায়। উল্লখ্যে, বগুড়ার কনফিডেন্স ফার্মা আয়ু’র হুমায়ন কবির, নিকো আয়ুর্বেদিক ল্যাবরেটরীজের ফজলুর রহমান, আর.কে ইউনানীর আব্দুল মজিদ, বি.জি ল্যাবরেটরীজ ইউনানীর এম.বারী সিদ্দিকী ও প্রিভেন্টিজ বাংলাদেশ ইউনানীর জয় আহমেদ জেনেরিক নামের ঔষধকে ট্রেড নামে বাজারজাত করে অধিক মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
যশোরের আশরাফুল ল্যাবরেটরীজ ইউনানী। কোম্পানীর মালিক হাকিম আশরাফুল ইসলাম চিকিৎসা ব্যবসার আঁড়ালে ঔষধ কোম্পানীর মালিক হওয়ার শুরূতে অনুমোদন ছাড়াই যৌনবর্ধক ট্যাবলেট হাব্বে-তিত বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। তার কারখানায় ক্যাপসুল-ট্যাবলেট তৈরির উপযোগী মেশিনারী না থাকায় কেরানীগঞ্জের একটি কারখানায় ঔষধ উৎপাদন করে মিরপুরের ডিপো ও বিক্রয় কেন্দ্র ছাড়াও সারাদেশে বিক্রি করছেন। উল্লখ্যে, ঝিনাইদহের প্রজ্ঞা ল্যাবরেটরীজ ও আকরাম হোসেন কয়েকটি জেনেরিক নামের ঔষধকে ট্রেড নামে বাজারজাত করছেন।
যাত্রাবাড়ীর মেডিসান ফার্মাসিউটিকালস আয়ু। ফুটপাতে মাইকিং করে পান্ডা মলম বিক্রি করে হকার বাচ্চু বা পান্ডা বাচ্চু এখন ঔষধ কোম্পানীর মালিক। কারখানার লে-আউট প্যাটান, পরিবেশ ছাড়পত্র, দক্ষ জনবল ও মান নিয়ন্ত্রনের ব্যবস্থা এবং ক্যামিষ্ট ও ফার্মাসিষ্ট না থাকলেও মোড়ক সামগ্রীর চুড়ান্ত অনুমোদন ছাড়াই ঔষধ উৎপাদন ও বাজারজাত করছেন। এক নামে অনুমোদন নিয়ে অন্য নামে বাজারজাত করার কারসাজী নিত্য দিনের। অবৈধ্য কারখানায় মানসম্মত কোম্পানীর ভিটামিন, ক্যালসিয়াম ও যৌনবর্ধক ট্যাবলেট-ক্যাপসুল নকল করে পান্ডা মলম বিক্রির আঁড়ালে বাজারজাত করার অপরাধে র্যাব অভিযান চালিয়ে ২ বছরের জেল ও অর্থ জরিমানা করেন। পরবর্তীতে একই অপরাধে র্যাব অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করলেও তার অবৈধ্য কর্মকান্ড বন্ধ হয়নি।
আশুলিয়ার রবিন ফার্মাসিউটিকালস্ আয়ু। ফিরোজ আহমেদ প্রতারণার মাধ্যমে এখন ঔষধ কোম্পানীর মালিক। বিষাক্ত ও ক্ষতিকারক ঔষধ ব্যবসায়ী হিসেবে তার পরিচিতি ব্যাপক। তিনি কলিকাতা হারবালে চাকুরি করার সুবাধে প্রতারণার মাধ্যমে নিজেই কলিকাতা হারবাল নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ঔষধ প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়াই কলিকাতা ও ইন্ডিয়া হারবাল এর আঁড়ালে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। বর্তমানে কলিকাতা হারবালের নাম পরিবর্তন করে রাজধানীর নয়া পল্টনে ‘ফেমাস আয়ুর্বেদিক ঔষধালয়’ নামে চিকিৎসা কেন্দ্র খুলে রোগীদের ধরিয়ে দিচ্ছেন রবিন ফার্মার বিষাক্ত ও ক্ষতিকারক ঔষধ আমলাসিড, টেনেক্স, সেপনিক, রফেক্স, ইক্স-আর ও দশমিক।
নারায়নগঞ্জের ইয়ুথ ল্যাবরেটরীজ লিঃ। ডা. মোশাররফ হোসেন চুড়ান্ত অনুমোদন ছাড়াই বাজারজাত করছেন ইয়ং-টেন, টু-অল, পোরন-ওয়াই। তিনি এসব ঔষধ বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান এস.এম.ফার্মার মাধ্যমে বাজারজাত করছেন। বিশেষ করে, গাইবান্ধা, বগুড়া, রংপুর, রাজশাহী, দিনাজপুর, নওগাঁ ও শান্তাহারে বিক্রির অভিযোগে নারায়নগঞ্জের সাবেক ড্রাগ সুপার ইয়ুথ ল্যাবরেটরীজের কারখানায় গিয়ে ব্যাপক অনিয়ম দেখে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নিলে তাকেই বদলী হতে হয়েছে। নকল-ভেজাল ব্যবসায়ী সাবেক ডিজির আত্বীয় পরিচয়ে জনস্বার্থ বিরোধী কর্মকান্ড চালিয়ে আসছেন যা প্রতারনার সামিল।
দিহান র্ফামাসউিটক্যিালস (আয়ু) এর বিরূদ্ধে একই ডি.এ.আর নাম্বার ব্যবহার করে ২ নামে একই ভিটামিন সিরাপ প্রস্তুত ও বাজারজাতরে অভিযোগ পাওয়া গছেে এছাড়াও উক্ত কোম্পানী এনজয় প্লাস ক্যাপসুল, এনজয় প্লাস সিরাপ,রুচিটন সিরাপ, দি- টন ও দি-গোল্ড নামক ট্যাবলটে র্দীঘদনি যাবত অবধৈ ভাবে বাজারজাত করছে। এই বিষয়ে অভিযোগ এনে ওষুধ প্রশাসন অধদিপ্তরের সাবেক মহা পরিচালক এর বরাবর একাধিক লিখিত অভিযোগ জমা হলে ও কতিপয় র্কমর্কতার দুনীতির কারণে দিহান র্ফামাসউিটক্যিালস (আয়ু) এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি ওষুধ প্রশাসন অধদিপ্তর। উক্ত কোম্পানী বলারিষ্ট নামে ৪৫০মিঃ লিঃ সিরাপ উৎপাদন ও বাজারজাত করছে যার ডি এ.আর নাম্বার: আয়ু-৪৯-এ-০৭, ব্যাচ নাম্বার:-০০৫, মূল্য ১৪০ টাকা এবং দি- টোন (বলারিষ্ট) ২০০ মি .লি. সিরাপ এর ডি.এ.আর নাম্বার:- আয়ু-৪৯-এ-০৭, ব্যাচ নাম্বার:-০০৫, মূল্য:-৯০টাকা। এখানে প্রশ্ন উঠে যে একই বলারিষ্ট (দি- টন) এবং বলারিষ্ট নামে একই ডি এ.আর নাম্বার (আয়ু-৪৯-এ-০৭) ব্যাবহার করে ২ নামে ভিটামিন ওষুধ উৎপাদন ও বাজরজাত করা কতটা আইন সদ্ধি। এই সব অভিযোগ এর বিষয়ে দিহান র্ফামাসউিটক্যিালস (আয়ু) এর মালিক মো. লিটন এর বক্তব্য জানতে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে সঠিক কোন উত্তর পাওয়া যায়নি। এব্যাপারে ড্রাগ প্রশাসনের মহাপরিচালক প্রচলিত নিয়মে ব্যবস্থা নিলে নকল-ভেজাল ব্যবসা বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর যারা এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের সহযোগীতা করছেন তাদের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকা উচিত।